Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

সিরাজগঞ্জ জেলা ব্র্যান্ডিং

বিস্তারিত

 

 

 

 

 

              

            

 

মুখবন্ধ

 

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত সিরাজগঞ্জ জেলা যমুনা নদীর গর্ভে অবস্থিত।প্রাচীন বঙ্গ জনপদের মোমেনশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল সিরাজগঞ্জ শহর।বাংলাদেশের বৃহত্তম সেতু বঙ্গবন্ধু সেতুর সাথে এ জেলার সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একসময় নদী ভাঙনে কবলিত এ জেলা ধীরে ধীরে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়ায় বর্তমানে নগরে রূপ পাচ্ছে।

আমাদের জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলির সাথে জড়িয়ে আছে এ জেলার ইতিহাস। এছাড়াও মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী এ জেলারই সন্তান। তাই রাজনৈতিক অঙ্গনে এ জেলার সক্রিয় ভূমিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগ থেকেই।

সপ্তম শতাব্দীর পর থেকেই ময়মনসিংহের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল অর্থাৎ সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ফরিদপুর বছরের প্রায় আট/নয় মাস পানির নিচে থাকতো। ফলে জনবসতি ছিল কম। এ অঞ্চল থেকে পানি সাগরের দিকে নেমে গেলে বছরের চার পাঁচ মাস সময়ে পাশ্ববর্তী কায়েম অঞ্চল থেকে লোকজন আবাদ বসত চালু রাখার জন্য ভীড় জমাতো।

নদী বিধৌত এ জেলায় কৃষিকাজই অন্যতম পেশা। প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চল চাষাবাদের জন্য ব্যবহৃত হতো। পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে চাষাবাদের জন্যে এখানে এসে ভীড় জমাতো কৃষকেরা। তাঁতের জন্য বিখ্যাত এ জেলায় তাঁত চাষ এখানকার কৃষকদের অন্যতম পেশা।তাই জেলা ব্রান্ডিং হিসেবেও বেছে নেয়া হয়েছে ‘তাঁতকুঞ্জ সিরাজগঞ্জ’।এখানকার তাঁতের তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছার সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। এই তাঁতকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এখানে কয়েক হাজার কল-কারখানা। এছাড়াও এখানকার মাটি চাষাবাদের জন্যে উর্বর হওয়ায় এখানে ধান চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকারের মৌসুমী শাক-সবজি চাষ করে অর্থনীতির চাকা চালু রাখে কৃষকেরা।

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলার সুখ্যাতি রয়েছে তরল দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় পণ্য উৎপাদনে। শাহজাদপুরে রয়েছে মিল্কভিটা যেখান থেকে দেশের মোট দুধের চাহিদার বিশাল একটি অংশ মেটানো হয়ে থাকে। গোবাথান ও চারণ ভূমি রয়েছে উপজেলায়।

 এছাড়াও বিখ্যাত চলন বিলের প্রায় ১০ শতাংশ এ জেলার তাড়াশ উপজেলায় অবস্থিত। যার ফলে বিভিন্ন প্রকারের মাছের জন্যেও সুখ্যাতি রয়েছে। এছাড়াও নদীবেষ্টিত জেলা হওয়ায় বিভিন্ন প্রকারের মাছ পাওয়া যায় এখানে।যমুনা নদী ছাড়াও এ জেলার অন্যতম প্রধান নদ-নদীর মধ্যে রয়েছে বড়াল,ইছামতি, করতোয়া, হুরাসাগর, গোহালা, বাঙালী, গুমনী এবং ফুলঝুড়ি।

এ জেলার বেলকুচি ও তাড়াশ উপজেলায় শীতকালে প্রচুর সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। সরিষা থেকে তেল উৎপাদন হয়ে থাকে। এই সরিষা ক্ষেতে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মৌচাষিগণ কৃত্রিম উপায়ে প্রচুর মধু উৎপাদন করে থাকেন।

সরকার এই জেলায় ইকোনমিক জোন স্থাপনের কাজ শুরু করায় জেলার অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়। এতে এখানকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিল্পখাতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের দিক থেকেও পিছিয়ে নেই সিরাজগঞ্জ জেলা। হাটিকুমরুলে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নবরত্ন মন্দির, শাহজাদপুরে অবস্থিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত রবীন্দ্র-কাচারি বাড়ি যেটি রবীন্দ্রনাথের পৈত্রিক জমিদার বাড়ি, ইলিয়ট ব্রীজ যেটি বড়াল নদীর উপর প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন বাংলা ও আসামের গভর্নর চার্লস ইলিয়ট, হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহঃ)এর মাজার, জয়সাগর দিঘী প্রভৃতি।

এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছে বিখ্যাত ব্যক্তিত্বর্গ। তাদের মধ্যে উল্লেখ্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী,মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ, সুচিত্রা সেন , সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী, গণিতবিদ যাদব চন্দ্র চক্রবর্তী, বিজ্ঞানী আব্দুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন প্রমুখগণ।

সিরাজগঞ্জ জেলাকে সারাদেশে এবং দেশ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পৌঁছে দিতে আমরা চেষ্টা করেছি এখানকার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন সম্ভাবনাময়ী খাতসমূহকে তুলে ধরতে। এর মধ্যে ‘তাঁতকুঞ্জ সিরাজগঞ্জ’ নামের মাধ্যমে মূলত তাঁত শিল্পকে জাগিয়ে তুলতে এবং দেশের বস্ত্রশিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা রয়েছে।

আমি আশা করি এই ব্রান্ডিং বুক প্রকাশের মাধ্যমে একনজরে সারাদেশের মানুষকে আমরা সিরাজগঞ্জ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি। একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে এই বইটি সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

ড. ফারুক আহাম্মদ

জেলা প্রশাসক

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়

সিরাজগঞ্জ

জেলা ব্র্যান্ডিং এর কর্মপরিকল্পনা

তাঁতশিল্পের বিবর্তন ও আধুনিকায়ন

তাঁত বাংলাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প। এ শিল্পের উদ্ভাবন, উন্নয়ন, প্রসার এবং কালপ্রবাহের বিবর্তনের মাধ্যমে একে সময়োপযোগী করে টিকিয়ে রাখা- এ সবই করেছে এ দেশের অশিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। হস্তচালিত যে তাঁত এবং এতদসংশ্লিষ্ট কুটির শিল্প মূলত একটি জনপ্রিয় লোকশিল্প। কারণ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এর উদ্ভাবন ঘটেনি। জীবনের প্রয়োজনে আদিকালে মানুষ এর সৃষ্টি করেছে। তার পর থেকে কোন প্রাতিষ্ঠানিক  শিক্ষা ছাড়াই মানুষের জীবনের বাস্তব প্রয়োজনে বংশ পরম্পরায় এই শিক্ষা চলে আসছে। কাজেই এটি যে একটি লোকশিল্প সে বিষয়ে কারো দ্বিমতের অবকাশ নেই।

জীবন-যাপন এবং সভ্যতার প্রয়োজনে খাদ্যের পরেই বস্ত্রের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই সারা বিশ্বেই এই শিল্প কমবেশি গড়ে উঠেছে। বস্ত্র শিল্প সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের খ্যাতি প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকেই। বাংলাদেশের সর্বত্রই তাঁতশিল্পের প্রচলন রয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলা তাঁতশিল্পের জন্য অন্যতম।

 সিরাজগঞ্জ জেলার প্রায় ৫০ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকায় তাঁতশিল্প অবস্থিত। জেলায় তাঁতী পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৪৬,৪০৩, তাঁত কারখানা প্রায় ১৪,৮৪৯ টি এবং তাঁত সংখ্যা প্রায় ৪,০৫,৬৭৯ টি। প্রতিবছর এ জেলায় তাঁত থেকে প্রায় ২০.৬৯ কোটি মিটার বস্ত্র উৎপাদিত হয়ে থাকে। এছাড়া এ শিল্প সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ২,০৮,১৫৬ জন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ জেলার তাঁতীরা শাড়ী, লুঙ্গি, গামছা, থান কাপড়, থ্রি পিচ, গ্রামীণ চেকসহ বিভিন্ন প্রকার বস্ত্র উৎপাদন করে থাকে। এ সকল তাঁতবস্ত্র রপ্তানি করে প্রতি বছর ৮০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হয়।

দেশের অন্যান্য জেলার মতো সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁত শিল্পে নিয়োাজিত অধিকাংশ লোক পল্লী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের প্রচলিত ব্যবস্থা এখনও অত্যন্ত অসংগঠিত। জেলার কয়েকটি হাটে তাঁতীদের উৎপাদিত বস্ত্র বিক্রি হয়ে থাকে যার মধ্যে সোহাগপুর হাট, শাহজাদপুর হাট, এনায়েতপুর হাট ও সিরাজগঞ্জ নিউমার্কেট হাট উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে শাহজাদপুর তাঁতের কাপড় সমগ্র রাজশাহী-রংপুর বিভাগের মধ্যে অত্যন্ত বিখ্যাত। বিদ্যমান বিপণন ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্ত্বভোগী মহাজন, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তাঁতীদের নিকট থেকে বস্ত্র ক্রয় করে।

সিরাজগঞ্জে উৎপাদিত এই বিশাল পরিমাণ কাপড় প্রধানত হস্তচালিত তাঁতে উৎপন্ন হচ্ছে। এই তাঁত কুষ্টিয়া ‘চিত্তরঞ্জন কটন মিলস’ এর তাঁতের মডেলে তৈরী বলে তা চিত্তরঞ্জন তাঁত নামে পরিচিত। চিত্তরঞ্জন তাঁত বর্তমান ভারত ভূখ- থেকে আমাদের দেশে এসেছে। ১৯৫৫ সালের দিকে একটি চিত্তরঞ্জন তাঁতের মূল্য ছিল মাত্র ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। বর্তমানে এরকম একটি নতুন তাঁত তৈরী করতে কমপক্ষে ১৫০০০ টাকা লাগে। কিšতু আগের তাঁতের যন্ত্রপাতি ভালো ছিল। চিত্তরঞ্জন তাঁত প্রধানত কাঠ, লোহার রড, লোহার পাত এবং কিছু বাঁশের জিনিস দিয়ে তৈরী। এই তাঁতে ঘরের মেঝের উপওে কাপড় বোনা যায়। কিন্তু আরেক প্রকার তাঁত রয়েছে তাকে খট্খটি তাঁত বলে। চিত্তরঞ্জন তাঁতের আগে শাহজাদপুরে সব খট্খটি তাঁত ছিল। খট্খটি তাঁত মেঝেতে গর্ত করে বিশেষ উপায়ে কাপড় বোনা হয়। এই তাঁতে সাধারণত গামছা, লুঙ্গি ও এই জাতীয় ছোট কাপড় বোনা হয়।

বর্তমানে হস্তচালিত তাঁতের জায়গা দখল করে নিয়েছে পাওয়ার লুম বা বিদ্যুৎচালিত তাঁত। তাই হস্তচালিত তাঁত এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সেই সাথে আগামী দিনের তাঁতীরা হয়ত ভুলে যাবে হস্তচালিত তাঁতের যন্ত্রাংশের নাম। পাওয়ার লুম সম্পূর্ণটাই লোহার তৈরী। এ তাঁতের দপতি, কোল নোরদ ও কাটা নোরদ কাঠের তৈরী। আর বাকি সবই লোহার তৈরী। একটি হ্যা-লুমে প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবে দুইটা শাড়ি বোনা যায়, খুব বেশি হলে তিনটা। আর পাউয়ারলুমে এর তিনগুণ উৎপাদন হয়। হ্যান্ডলুমে উৎপাদন কম কিন্তু মজুরী বেশি। অন্যদিকে পাওয়ার লুম উৎপাদন বেশি, মজুরী কম। এই উভয় প্রকার তাঁতেই উৎপাদন অনুপাতে মজুরী দেওয়া হয়। তুলনামূলকভাবে উৎপাদন বেশি হওয়ায় শ্রমিকরা হ্যান্ডলুম ছেড়ে পাওয়ার লুমের দিকে ঝুকছে বেশি।

তাঁতশিল্প ও এর সাথে যুক্ত অনেক বিষয়ে আধুনিকায়ন হলেও এর সাথে সম্পর্কিত লোকবিশ্বাস ও সংস্কার আজও সম্পূর্ণরুপে উঠে যায়নি। এখনো প্রতিদিন কাজ শুরুর আগে মুসলমান শ্রমিকরা তাঁত সেলামি কওে এবং হিন্দু শ্রমিকরা করজোড়ে তাঁত প্রণাম করে। তাদের বিশ্বাস এতে তাদের কাজ নির্বিঘেœ হবে। আবার অনেক মহিলার বিশ্বাস তাঁতের মানুষ মন্ত্রবলে নষ্ট করে। তাঁদের বিশ্বাস এর ফলে কাপর বোনার সময় প্রচুর সুতা ছিঁড়ে যায় এবং কাপড় বোনা কষ্টকর এবং প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। আসলে সুতা রং করা, মাড়ি করা ইত্যাদি প্রস্তÍত প্রক্রিয়ায় ক্রটির কারণেই এরকম হয়ে থাকে। তবে এর সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন ঘটেছে। যেমন আগের দিনের শ্রমিকরা শ্রমের ক্লান্তি ভোলার জন্য গলা ছেড়ে পল্লিগীতি ও লোকসংগীত ধরণের গান গাইত। তারপর তাদের কণ্ঠে শোনা গেল সিনেমার গান। অত:পর একসময় নিজেরা গান না গেয়ে রেডিওর গান শুনত। এখন সেই রেডিওর জায়গা দখল করে নিয়েছে মোবাইল ফোন।

তাঁতবস্ত্র তৈরীর ত্যানা (টানা) প্রস্তÍত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাপড় বোনার সময় সুতাকে প্রয়োজন মতো টান করে নিয়ে একটা মোটা লম্বা কাঠের সাথে অথবা ড্রামের সাথে জড়ানো হয়। এ প্রক্রিয়ায় সুতা টান করে নেওয়া হয় বলে একে টানা বলে। এই টানা শব্দই লোক-উচ্চারণে তানা বা ত্যানা হয়েছে। ত্যানা প্রস্তÍত প্রক্রিয়াকে ‘ত্যানা কাড়ানো’ বলে।

তাঁতীরা প্রত্যাশা করে তাদের উৎপাদিত বস্ত্রের বিক্রয় ও রপ্তানির মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের উন্নয়নসহ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে। কিন্তু অবহেলিত তাঁতীদের সেই প্রত্যাশা অপূর্ণ থেকে যায়। ক্রমাগত সুতার মূল্য, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির দাম বৃদ্ধি এবং তাদের উৎপাদিত বস্ত্র সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের সমস্যার কারণে তাঁতীরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা ক্রমান্বয়ে হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। এভাবে আর্থিক মেরুদ- ভেঙ্গে পড়ার কারণে এ জেলার অনেক তাঁতী পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে।

এ সকল অসুবিধা দূরকরণের লক্ষ্যে ও সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁত শিল্পের সার্বিক উন্নয়ন ও তাঁতীদের কল্যাণার্থে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের তিনটি বিসিক সেন্টার এ জেলায় রয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, কামারখন্দ, কাজিপুর ও তাড়াশ উপজেলা নিয়ে বিসিক সেন্টার সিরাজগঞ্জ, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলা নিয়ে বিসিক সেন্টার শাহজাদপুর এবং উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ উপজেলা নিয়ে বিসিক সেন্টার উল্লাপাড়া কাজ করে যাচ্ছে। উল্লেখিত ৩টি বিসিক সেন্টার হতে তাঁতীদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচী প্রকল্পের আওতায় ৩,৮৫০ জন তাঁতীর মধ্যে ৬ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। উক্ত ঋণ কার্যক্রম ১৯৯৯ সালে শুরু হয়ে অদ্যবধি চলমান রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কাস্টমস হাউসে রক্ষিত সুতা স্বল্প মূল্যে বিভিন্ন তাঁতী সমিতিতে বরাদ্দ দেয়া হয়। তাঁতীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নরসিংদী তাঁত প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও পাবনা জেলার বেড়াতে তাঁত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড উক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহে তাঁতীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এছাড়া পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে বেনারসী পল্লী স্থাপন করা হয়েছে যেখানে সিরাজগঞ্জ জেলার অনেক তাঁতী রয়েছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিশেষ করে বন্যার সময় বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড তিনটি বিসিক সেন্টারের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁতীদের আর্থিক অনুদান দিয়ে দূর্যোগকালীণ সময়ে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বিভিন্ন তাঁতী সমিতি গঠনের মাধ্যমে তাঁতীদের সুসংগঠিত করে থাকে।